দুনিয়ার অলমোস্ট আশি শতাংশ প্রযুক্তি আর শতভাগ ইলেক্ট্রনিক্স বা ইলেক্ট্রিসিটির সাথে যার নাম জড়ায় আছে তিনি নিকোলা টেসলার। যিনি একজন সার্বিয়ান-অ্যামেরিকান উদ্ভাবক, তড়িৎ প্রকৌশলী, যন্ত্র প্রকৌশলী এবং ভবিষ্যদ্বাবী যিনি আধুনিক পরিবর্তী তড়িৎ প্রবাহ ও তারবিহীন তড়িৎ পরিবহন ব্যবস্থা আবিষ্কারের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।
নিকোলা টেসলার জন্ম ১৮৫৬ সালের ১০ জুলাই ক্রোয়েশিয়ার এক গ্রামে। তাঁর বাবা ছিলেন একজন ধর্মযাজক। ৫ ভাই বোনের মধ্যে ছিলেন চতুর্থ। তার বাবার ইচ্ছে ছিল নিকোলা-ও বড় হয়ে প্রিস্ট হবে তার মত। ছোট থেকেই তাকে সেটা নিয়ে চাপ দিতেন। কিন্তু নিকোলা সেটা চাইতেন না, একদমই না। ছোটবেলা থেকেই টেসলার গনিতের উপর দক্ষতা ছিলো প্রবল। জটিল সব অংকের উত্তর মুখে মুখে বলে দিতে পারতেন। নিকোলা টেসলার কৈশর কেটেছে মার্ক টোয়েনের উপন্যাস পড়ে। তিনি অস্ট্রিয়ার একটি পলিটেকনিকে ১৮৭৫ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যান। প্রথম বছরে তিনি একটা লেকচারও মিস করেন নি। প্রকৃতপক্ষে এমন কিছুই তিনি মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন। এমনকি টেসলা পলিটেকনিকে প্রথমবর্ষে সর্বচ্চ নম্বর পান। সব বিষয়ে তাঁর ছিল হায়েস্ট গ্রেড। ডিনের থেকে লেটার পেয়েছিলেন তার বাবা, “আপনার ছেলে প্রথম শ্রেণীর স্টার।” সেখানে একজন শিক্ষকের সাথে তার প্রযুক্তিগত কোন একটি বিষয়ে মতভেদ হয়। ল্যবরেটরিতে দিনে প্রায় ১৮ ঘন্টা করে কাজ করে নিজেকে সঠিক প্রমান করেন। প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টানা খাটতেন তিনি। কোন ছুটির দিনও বিশ্রাম নিতেন না।
নিকোলা টেসলা ৮টি ভাষা জানতেন এবং ৩০০টিরও বেশি প্যাটার্ন এর আবিষ্কর্তা। ইলেক্ট্রিক মোটর, জেনারেটর, রেডিও ফিকুয়েন্সী, রিমোর্ট কন্ট্রোল, লেজার, অল্টারনেটিং কারেন্ট ছাড়াও ফ্রি এনার্জী তারই আবিষ্কার। ১৮৯৮ সালে তিনি রিমোট চালিত নৌকা আবিষ্কার করেছিলেন। যার মাধ্যমে মূলত তিনি তিনটি আবিষ্কার করেছিলেন। পৃথিবীর প্রথম রিমোট, প্রথম রোবট এবং প্রথম গাইডেড মিসাইল। আপনি কি জানেন, হাইড্রোইলেক্ট্রিসিটির প্রথম ধারণা দেন টেসলা। তিনিই নায়াগ্রা ফলস থেকে প্র্যাক্টিকাল এনার্জি সোর্স বানানোর কথা বলেন। টেসলা একটা ভূমিকম্পযন্ত্র উদ্ভাবন করেন।দুনিয়ার প্রায় আশি শতাংশ প্রযুক্তির সাথে যেমন নিকোলার টেসলার নাম জড়িত ঠিক এভাবেই দুনিয়ার ৭৮% মানুষ টেসলা সম্পর্কে জানে না। এ ব্যর্থতা কেবল আমাদেরই। বেপারটা হাস্যকর নয় আমাদের জন্য লজ্জার। আমাদের সবার টেসলা সম্পর্কে জানা উচিত। ক্রিশ্চিয়ান বেল ও জ্যাকম্যান অভিনীত “দ্যা প্রেস্টিজ” এবং”কারেন্ট ওয়ার” সিনেমায় নিকোলা টেসলার জীবনী, এডিশনের সাথে দ্বন্দ, তার আবিষ্কৃত প্যাটার্নগুলো, তারবিহীন বিদ্যুৎ বিতরণ অল্প পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিলো। সেটা চালু করার পর নিউ ইয়র্কের একটা নেইবরহুড প্রায় ধ্বংসই হয়ে যায়! টেসলা কৃত্রিম বজ্রপাত produce করেছিলেন। সেটার শব্দ এত জোরে হয়েছিল যে ১৫ মাইল দূরে কলোরাডো থেকেও শোনা গিয়েছিল। নাসা সহ বিশ্বের নামকরা সব রিসার্চ ইন্সটিটিউটে টেসলার আবিষ্কৃত প্যাটার্ন গুরুত্বের সাথে গবেষণা করা হয়।
টেসলা ছিলেন একজন তুখোড় মেধাবী। তার ছিল ফটোগ্রাফিক মেমোরি, পুরো বই তিনি মুখস্ত বলতে পারতেন। তিনি অল্টারনেটিং জেনারেটরের ওয়ার্কিং স্কেচ কল্পনাতেই তৈরি করেছিলেন, হাজার হাজার ডিজাইন করতে পারতেন মনের মধ্যে। জানা যায় টেসলা ঘুমাতেন মাত্র দুই ঘন্টা, মাঝে মাঝে ঝিমাতেন, যাকে তিনি পাওয়ার ন্যাপ এর মতো বলতেন। তার সম্মানে, ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স ইন্টেন্সিটির এসআই একক রাখা হয় টেসলা। বিশ্বব্যাপি জুলাই এর ১০ তারিখ নিকোলা টেসলা দিবস পালন করা হয়। টেসলা ঠিক তার যুগের বিজ্ঞানী ছিলেন না। তিনি ছিলেন যুগের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকা বিজ্ঞানী। হয়তো বা ভুল সময়েই জন্মেছিলেন তিনি। একজন টেসলাপ্রেমী হিসেবে আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস ছিলো তাঁর সম্পর্কে আপনাদের জানানোর। নিকোলা টেসলার প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা।
No comments:
Post a Comment